আজ সোমবার, ২২শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৬ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

তাবলীগের দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে বিভ্রান্তিতে মুসল্লিরা

  • তাবলীগ নিজেদের মনগড়া ভিত্তি সৃষ্টি করেছে- মহিউদ্দিন হামিদী
  • তাবলীগের দুইপক্ষই বাতেল- তামিম বিল্লাহ

সংবাদচর্চা রিপোর্ট:
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সাদপন্থীদের ইজতেমা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা মার্কাজ মসজিদ দখল চোষ্টাকে কেন্দ্র করে তাবলীগের দুই পক্ষের মাঝে তুমুল দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। আর এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ মুসল্লিরা বিভ্রান্তিতে পড়ছে বলে অভিযোগ তাদের। কোন পক্ষটি সঠিক এই নিয়েই সাধারণ মানুষের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।

প্রসঙ্গত , গত কয়েকদিন যাবৎ নগরীতে সাদপন্থীদের বিরুদ্ধে নানা কর্মসূচি পালন করছে তাগলীগের জুবায়ের অনুগত পন্থী ও ডিআইটি মসজিদের খতিব আব্দুল আউয়াল অনুসারীরা। বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ সভা সহ নানা হুমকি ধামকি দিলেও এ নিয়ে মাঠে নামতে দেখা যায়নি সাদপন্থী তাবলীগের নেতাদের। জানা যায়, মারকাজ মসজিদ নিয়ে শহরে ফের তাবলীগ জামাতের দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। জেলা মারকাজ মসজিদ দখল করার পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ শহরের ডিআইটি জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও তার অনুসারীদের। যদিও এই মসজিদে আউয়াল অনুসারীদেরই প্রভাব রয়েছে। গত ২১ জুন শুক্রবার ও ২৯ জুন শুক্রবার বিকেলে নানা সংগঠনের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে রাস্তায় নামে আব্দুল আউয়াল। সাদপন্থী নেতাদের উদ্দেশ্য করে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন এ নেতারা। আর এই সকল স্বার্থবাজ নেতাদের দ্বন্দ্বে কারনেই সাধারণ মুসল্লিরা বিভ্রান্তিতে পরছে বলে অভিযোগ অনেকে।

সূত্র বলছে, ইসলাম শান্তির ধর্ম। এই ধর্মে রক্তারক্তি নেই। অন্য ধর্মের মানুষ এই ধর্মের কমকান্ড দেখে অনুপ্রানিত হয়ে ইসলাম গ্রহন করবে। কিন্তু তাবলীগের দুই পন্থীদের এমন রেষারেষীর কারনেই সকল ধর্মের সমালোচনা চলছে। নিজেদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংর্ঘষ বন্ধ করে, শান্তির পথ বেছে নেওয়ার আহবান সাধারণ মুসল্লিদের। তাবলীগ জামাতের মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জে তাবলীগের দুই পক্ষের বিরোধ পুরনো।

এ নিয়ে বিগত সময়ে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। গত বছরের ১ নভেম্বর শহরের আমলাপাড়া এলাকায় অবস্থিত মারকাজ মসজিদ বয়ান করাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে আউয়াল পন্থীরা ২ নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিপক্ষকে কড়া বক্তব্যের মাধ্যমে হুশিয়ার করে দেন। পরে ৬ নভেম্বর বাদ মাগরিব মারকাজ মসজিদে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগেও তৎকালীন পুলিশ সুপার মঈনুল হক মাওলানা আব্দুল আউয়ালকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি সুরাহা করতে বলেন। কিন্তু কোন কিছুতেই এই দুই পক্ষের বিরোধ মেটে না। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে শহরে রক্তারক্তির সম্ভবনা রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন হামিদী বলেন, ‘ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে ৫টি কিন্তু তাবলীগ জামাত বলছে তাদের মনগড়া ভিত্তি সৃষ্টি করে প্রচার করেছে ৬টি। যা পুরোটাই ভ্রান্ত। এক সময় যারা এই ৬টি ভ্রান্ত ভিত্তির প্রচার করতো। তারাই এখনো সঠিক ৫টি ভিত্তির প্রচার করার কারণেই নিজেদের মধ্যেই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষকে হেফাজত করতে তাদের সঠিক পথে আসতে হবে। মনগড়া কোন আকিদা গড়া যাবে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আকিদার চাদরের নিচে আসতে হবে’।

তাবলীগের দুইপন্থীদের বাতেল আখ্যা দিয়ে সুন্নি ঐক্য পরিষদের সাংঠনিক সম্পাদক তামিম বিল্লাহ বলেন, ‘দেড় হাজার বছর পূর্বে আমাদের রাসূল পাক (সা:) এর তাবলীগ আর বর্তমানের তাবলীগ পুরোটাই ভিন্ন। রাসূল পাক (সা:) এর সময় থেকেই ইসলামের আকিদা ৫টি, কিন্তু বর্তমান তাবলীগের নেতৃবৃন্দ সেই আকিদা ভেঙ্গে নিজেদের মনগড়া আকিদা গড়েছেন। আর তাদের ভ্রান্ত আকিদার কারনেই নিজেদের মধ্যে আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছে’।

সাধারণ মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে কি বলেবেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘সাধারণ মানুষ ইসলামের প্রতি দূর্বল। দাড়ি টুপি জোব্বা পরে দ্বীনের দাওয়াত দিতে যায় তাবলীগ পন্থীরা। আর মানুষকে ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করে। তখন সাধারণ মানুষ ধারণা করে তাবলীগপন্থীরা ভালো। কিন্তু বর্তমান তাদের দ্বন্দ্বের অবস্থা দেখলে বুঝবে তাবলীগ কি?

আড়াইহাজার খাগকান্দা ইউনিয়নের সাদপন্থী তাবলীগের আমীর মো. মাসুদ’র সঙ্গে বেশ কয়েকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলেও তিনি তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি রিসিভ করেনি।